আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর জন্য কি আওয়ামী লীগ?
আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর জন্য কি আওয়ামী লীগ?
বিএনপির অনেকেই
আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর সঙ্গে আওয়ামী লীগকে সরাসরি যুক্ত করে বিবৃতি বা বক্তব্য দিয়ে থাকেন।
ঘটনা প্রবাহের বিশ্লেষণ করলে েএটি নিছকই রাজনৈতিক বক্তব্য বলে মনে হয়।
আরাফাত
রহমান কোকোর মৃত্যুর সঙ্গে আওয়ামী লীগকে সরাসরি যুক্ত করার অভিযোগটি একটি
রাজনৈতিক বক্তব্য এবং এর সত্যতা
যাচাইয়ের জন্য ঘটনাপ্রবাহকে নিরপেক্ষভাবে
দেখা প্রয়োজন।
ঘটনার সারসংক্ষেপ
- গ্রেফতার: কোকো গ্রেফতার হন ৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৭। তখন ক্ষমতায় ছিল ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই সরকারের সময়ে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে শুধু বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ অনেক রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনাও তখন কারাগারে ছিলেন। সুতরাং, কোকোর গ্রেফতারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতৃত্বের কোনো সম্পর্ক ছিল না।
- মুক্তি ও বিদেশ গমন: তিনি প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান মে, ২০০৮ সালে। তখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ডিসেম্বর ২০০৮ এর নির্বাচনের পর, অর্থাৎ জানুয়ারি ২০০৯ সালে। সুতরাং, তার দেশত্যাগের সময়ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না।
- প্রবাস জীবন ও মৃত্যু: এরপর তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করেন এবং ২৪ জানুয়ারি, ২০১৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই মারা যান। এই সময়ে, অর্থাৎ ২০১৫ সালে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল।
অভিযোগের ধরণ ও রাজনৈতিক
প্রেক্ষাপট
কোকোর
মৃত্যুর জন্য আওয়ামী লীগকে
দায়ী করে যে বক্তব্যগুলো
আসে, সেগুলো সাধারণত দুটি আঙ্গিকে উপস্থাপন
করা হয়:
১.
পরোক্ষ বা নৈতিক দায়: এই যুক্তির মূল
কথা হলো, আওয়ামী লীগ
সরকার ক্ষমতায় আসার পর আরাফাত
রহমান কোকোর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো সচল
রাখে এবং নতুন মামলাও
করে। তাকে দেশে ফেরার
মতো রাজনৈতিক ও আইনি পরিস্থিতি
দেওয়া হয়নি। তাকে নির্বাসিত জীবন
যাপন করতে বাধ্য করা
হয়েছে। এই মানসিক চাপ,
দেশ ও পরিবার থেকে
বিচ্ছিন্ন থাকার যন্ত্রণা এবং ক্রমাগত আইনি
হয়রানির কারণেই তার স্বাস্থ্য ভেঙে
পড়ে এবং অকালে হৃদরোগে
আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা
যান।
বিএনপি
ও তার সমর্থকদের পক্ষ
থেকে বলা হয়, এটি
একটি "রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড"। এখানে "হত্যা"
শব্দটি সরাসরি শারীরিক অর্থে ব্যবহার না করে বলা
হয় যে, সরকারের সৃষ্ট
প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তার মৃত্যু ত্বরান্বিত
হয়েছে। তারেক রহমান বা অন্য নেতারা
যখন পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন, তারা মূলত এই
যুক্তিটিই তুলে ধরেন।
২.
সরাসরি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ: কিছু ক্ষেত্রে অতি-উৎসাহী বা চরমপন্থী সমর্থকেরা
সরাসরি ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব প্রচার করেন, যেখানে দাবি করা হয়
যে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা
করা হয়েছে। তবে এই ধরনের
দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ বা
বিশ্বাসযোগ্য তথ্য কখনোই জনসমক্ষে
আসেনি এবং এটি মূলত
রাজনৈতিক বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্য হিসেবেই বিবেচিত হয়।
আওয়ামী লীগ বা এর
সমর্থকদের পাল্টা যুক্তি কী?
- আইনি প্রক্রিয়া: আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোকোর বিরুদ্ধে মামলাগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শুরু হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই চলেছে। দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ,
যেমন—সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের মামলায় আদালতের রায়ও হয়েছিল, যেখানে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। সরকার কেবল আইনি প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিয়েছে।
- স্বেচ্ছায় প্রবাস: তিনি স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে আইনি মোকাবেলা করেননি। সরকার তাকে দেশ থেকে জোর করে বের
করে দেয়নি বা তার প্রত্যাবর্তনে কোনও বাধা তৈরি করেনি। তিনি আইনি প্রক্রিয়া এড়ানোর জন্যই বিদেশে অবস্থান করছিলেন।
- মৃত্যুর কারণ: তার মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে, যা একটি স্বাভাবিক শারীরিক অসুস্থতা। এর সঙ্গে রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি খোঁজা শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা।
উপসংহার
প্রশ্ন
হলো, "কোকোর মৃত্যুর জন্য কি আওয়ামী লীগ?"
- সরাসরি সম্পর্ক: জনসমক্ষে উপলব্ধ তথ্য অনুযায়ী, আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো সরাসরি সম্পর্কের প্রমাণ নেই। তিনি দেশের বাইরে, মালয়েশিয়ায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
- পরোক্ষ বা রাজনৈতিক অভিযোগ: বিএনপি এবং এর সমর্থকরা যে অভিযোগ করেন, তা হলো—আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক চাপ, মামলা ও হয়রানির কারণে সৃষ্ট মানসিক যন্ত্রণার ফলেই কোকোর অকাল মৃত্যু হয়েছে। এটি একটি রাজনৈতিক অভিযোগ, যা প্রমাণসাপেক্ষ নয় এবং মূলত প্রতিপক্ষকে নৈতিকভাবে দায়ী করার একটি কৌশল।
সুতরাং,
এটি মূলত একটি রাজনৈতিক
বয়ান বা ন্যারেটিভ, যা
প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে
ব্যবহার করে থাকে। এর
factual ভিত্তি খুবই দুর্বল, কিন্তু
রাজনৈতিক মাঠে এর ব্যাপক
ব্যবহার রয়েছে।
